ভূস্বর্গ ভ্রমণ

#AH
#Kashmir
#Ladakh

সর্বজনবিদিত ভূস্বর্গ কাশ্মীরের সাথে প্রথম পরিচয় ৮০’র দশকের হিন্দি সিনেমার মাধ্যমে। সেই ভূস্বর্গ স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছাটা পূরণ হলো আগস্ট মাসের দুই সপ্তাহব্যাপী জম্মু ও কাশ্মীর ট্যুরে। আক্ষরিক অর্থেই এটা ছিল জম্মু ও কাশ্মীর ট্যুর। জায়গাগুলো ছিল শ্রীনগর, সোনামার্গ, গুলমার্গ, পেহেলগাম, এবং একটি তুলনামূলক অচেনা জায়গা দুধপাথরি। দুই সপ্তাহের দুই পর্যায়ে বিভক্ত এই ভ্রমণে প্রথম সপ্তাহে ছিলাম এই যায়গাগুলোতে আর দ্বিতীয় সপ্তাহে ছিলাম হালের সেনসেশন লাদাখে।

খরচ বাঁচাতে ঢাকা থেকে বাস-এ করে কলকাতা। এবং প্রায় দুইদিন সময় বাঁচানোর জন্য ট্রেন-এর বদলে প্লেন-এ যাওয়া সমীচীন মনে করলাম। ট্রেন-এ কাশ্মীর যাবার উপায় দুইটা। এক: কলকাতা থেকে দিল্লী তারপর দিল্লী থেকে জম্মু, জম্মু থেকে শ্রীনগর!! দুইদিনের ব্যাপার। অথবা কলকাতা থেকে জম্মু এক্সপ্রেস-এ জম্মু (দুই রাত ট্রেন-এ) তারপর জম্মু থেকে শ্রীনগর বাসে। এখানেও দুই দিনের ব্যাপার। তার চাইতে প্লেন-এ যাওয়া অনেক ভালো খরচ, কষ্ট, আর সময় বিবেচনায়। মাসখানেক আগে টিকিট কাটলে অনেক সস্তায় পাওয়া যাবে। মজার ব্যাপার হলো রাজধানী এক্সপ্রেস-এর ৩ টিয়ার সিটের ভাড়া প্লেন ভাড়ার চেয়ে সামান্য কম! কলকাতা পৌঁছানোর দিন হোটেলে রাতটুকু পার করে পরদিন সকালে ইন্ডিগো এয়ার-এ করে দুই ঘন্টার দিল্লী-তে যাত্রাবিরতি শেষে বিকালে শ্রীনগর পৌছালাম। হাউসবোট আগেই ঠিক করা ছিল বুলেভার্ড রোডে ৭ নম্বর ঘাটে New Bul Bul Group of Houseboat। হোটেল তো সব জায়গাতেই আছে, কিন্তু ডাল লেকের উপর হাউসবোট হলো শ্রীনগরের ঐতিহ্য। ভাড়া-ও হোটেলের চাইতে খুব একটা যে বেশি তাও না. সকাল আর রাতের খাবার সহ ১৫০০ রুপি সস্তায় বলা যায়। ঘাট থেকে হাউসবোট যাবার একমাত্র উপায় শিকারা যেটা হাউসবোটের নিজস্ব ব্যবস্থায় আশা-যাওয়া করা যায়। এয়ারপোর্ট অথবা ট্রেন স্টেশন থেকে ডাল লেক ঘাট যেতে প্রিপেইড ট্যাক্সিতে ভাড়া পড়বে ৭২০ রুপি। যদি হাউসবোটে আগে থেকে বলে রাখেন ওরাই পিকআপের ব্যবস্থা করবে আরো কম খরচে। সব দিক বিবেচনায় হাউসবোট আগে থেকে বুক করে যাওয়া ভালো। সেদিন আর কোথাও ঘুরে দেখার মতো সময় ছিলোনা, রাতে বুলেভার্ড রোডে ডাল লেক ঘেঁষে হাঁটাহাঁটি করে বেড়ানো ছাড়া। হাউসবোটের ম্যানেজার-এর সাথে কথা বলে ৬ দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিলাম প্রতিদিন ২২০০ রুপিতে। দরদাম করলে আরো হয়তো কমানো যেতে পারে. সাধারণত ১৮০০-২২০০ রুপি হয় প্রতিদিনের জন্য। সোনামার্গ, গুলমার্গ আর দুধপাথরি দেখতে রাতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই, শ্রীনগরে থেকেই ডে-ট্রিপে এটা করা ভালো. শুধু পেহেলগামে রাতে থাকার দরকার আছে কারণ একদিনে পেহেলগাম দেখা সম্ভব না। পেহেলগাম কাশ্মীরের সবথেকে সুন্দর জায়গা। যাই হোক, দ্বিতীয় দিন সকালে সোনামার্গ গেলাম. সোনামার্গের একমাত্র আকর্ষণ খাজিয়াস গ্লেসিয়ার দেখার জন্য মাথাপিছু ১০০০ রুপিতে পনি ভাড়া করলাম. গাড়িতেও যাওয়া যায়। শীত্কাল না হওয়া সত্ত্বেও বরফ ছিল. স্লেজিং-ও করতে পারেন চাইলে. সোনামার্গের আসল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে হবে শীতকালে, অক্টোবর থেকে মার্চ এর মধ্যে. সোনামার্গ দেখে বিকালে ফিরে আসলাম শ্রীনগরে।

পরদিন সকালে বাক্স-পেট্রা সমেত রওনা হলাম পেহেলগামের উদ্যেশ্যে। হোটেল ঠিক করেছিলাম রাফটিং পয়েন্টে Castle Rock Resort। অসাধারণ সুন্দর জায়গা। রুমের জানালা আর বারান্দা দিয়ে সামনে তাকালে বিখ্যাত Lidder Lakeআর পিছনে পর্বতশ্রেণী। অসাধারণ দৃশ্য। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে গেলাম “মিনি সুইজারল্যান্ড” খ্যাত “Baisaran” দেখতে। এখানেও পনি নিতে হয়। মিউনিসিপ্যালিটির রেট বলা থাকলেও দরদাম করতে হয়। আমরা ৪০০০ রুপিতে চারটা পনি নিয়েছিলাম। রাস্তা খুবই বিপদসংকুল, কোথাও খাড়া উপরে উঠতে হয় আর কোথাও নিচে নামতে হয়। কষ্ট এবং ভয় দুই জয় করে যখন আপনি Baisaran পৌঁছাবেন তখন সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যাবে চোখজুড়ানো সুন্দর জায়গা দেখে। পুরাই অস্থির। বিকালে হোটেলে ফিরে টিভি দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা কারণ পেহেলগামের আবহাওয়া কাশ্মীরের অন্যান্য জায়গার থেকে আলাদা। গ্রীস্মকালেও ওখানে রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে।
পরদিন পেহেলগামের বাকি আকর্ষণ যেমন আরু ভ্যালি ও বেতাব ভ্যালি দেখার জন্য ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হলো। এখানে বলে রাখি শ্রীনগরের বাইরে যেখানেই যান না কেন গাড়িতে শুধু ট্যুরিস্ট ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে দেয়। লোকাল ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে যাবার জন্য ওখানকার মিউনিসিপ্যালিটির ট্যাক্সি ভাড়া করতে হয়। ভাড়া নির্দিষ্ট করা আছে গাড়ির মান অনুসারে। আমরা আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি আর চন্দনওয়ারি এই তিনটা স্পট দেখতে ১৬০০ রুপিতে মারুতি ইকো নিয়েছিলাম। নিয়ম হলো প্রতিটি স্পটে ১ ঘন্টা করে বরাদ্দ। এক ঘন্টার বেশি হলে প্রতি ঘন্টার জন্য ৩০০ রুপি করে অতিরিক্ত দেবার নিয়ম। যদিও এক ঘন্টা যথেষ্ট দেখার জন্য। আরু ভ্যালি খুবই সুন্দর একটি জায়গা। বেতাব ভ্যালি বিখ্যাত সানি দেওল – অমৃতা সিং অভিনীত “Betaab” সিনেমার পর থেকে। চন্দনওয়ারি থেকে বেতাব ভ্যালি যাবার পথে উপর থেকে বেতাব ভ্যালি’র দৃশ্য ভোলার না। চন্দনওয়ারি আহামরি কিছু না, ওখানে না গেলেও চলে। এই স্পটগুলো দেখা শেষে শ্রীনগর ফিরতে রাত হয়ে গেলো। এসে উঠলাম অন্য একটি হাউসবোটে Houseboat Ambassador। এটাও ৭ নং ঘাটেই, শিকারাতে যেতে হয়। পরের দুই দিন গুলমার্গ আর দুধপাথরি ঘুরলাম. গুলমার্গের প্রধান আকর্ষণ দুই ফেজের গন্ডোলা। প্রথম ফেজ Gulmarg to Kungdoori ৭০০ রুপি আর দ্বিতীয় ফেজ Kungdoori to Apparwath ৯০০ রুপি করে। Chair Lift ও আছে Kungdoori থেকে কিন্তু শুধু শীতকালের জন্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৪০৩ ফুট উপরে Apparwath Peak এ যাবার অভিজ্ঞতা ছিল দারুন। ওখানে নিশ্বাস নিতে সামান্য সমস্যা হয় উচ্চতার কারণে। ওখানেও স্লেজিং-এর ব্যবস্থা আছে. চাইলে স্কিইং-ও করতে পারেন। গুলমার্গ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড-এ নামতেই পনিওয়ালারা ঘিরে ধরবে এটা-ওটা দেখাবে এই বলে পনি নেবার জন্য। কোনো দরকার নেই পনি ভাড়া করার। বরঞ্চ হেঁটে দেখা অনেক ভালো আর আনন্দের। বিকালের মধ্যেই শ্রীনগর ফিরে আসলাম। পরদিন গেলাম দুধপাথরীতে। আমার মতে পেহেলগামের পরে কাশ্মীরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হলো দুধপাথরি। সবুজ meadow ছাড়াও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর স্পট আছে ওখানে।
ডাল লেকে থাকার সময়ই ঠিক করেছিলাম নিগীন লেক-ই বা কেন বাদ থাকবে! ডাল লেকের তুলনায় নিগীন লেক অনেক পরিষ্কার আর হাউসবোট থেকে একইসাথে লেক ও পাহাড়ের ভিউ পাবার জন্য সেরা জায়গা হলো নিগীন লেক। সেকারণেই শেষ রাতটা কাটানোর জন্য বেছে নিয়েছিলাম New Buckingham Palace Houseboat। মাত্র দুই রুমের এই হাউসবোটটি লেকের সাথে parallel ভাবে থাকার কারণে রুমের জানালা দিয়েই বিস্তৃত লেক আর পিছনে পর্বতশ্রেণীর চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়।

শেষ দিনটি শ্রীনগর দেখার জন্য রেখেছিলাম। প্রথমে গেলাম হজরতবাল মসজিদে। মহানবী সা: এর চুল গচ্ছিত আছে ওখানে যা বছরের নির্দিষ্ট দিনেই দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর গেলাম ৩ টি মুঘল বাগানের একটি শালিমার বাগে। অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে ওখানে। অনেক গুলা ঝর্ণা আছে। এর পর নিশাত বাগ আর চশ্মেশাহী। চশ্মেশাহীতে একটা Natural Spring আছে যেটার উৎস আজ আবিষ্কার করা যায়নি। কথিত যাচ্ছে এটার সুস্বাদু পানি নাকি চোখের জন্য খুব ভালো. সবার শেষে শঙ্করাচার্য মন্দির যেখান থেকে পুরো শ্রীনগর দেখা যায়। ৩৫০ টি সিঁড়ি পার হওয়াটা কষ্টকর কিছু নয়. আফসোস একটাই মোবাইল ফোন, ক্যামেরা জমা রেখে যেতে হয়।
রসনা বিলাসের প্রসঙ্গে বলা যায় কাশ্মীর হলো আপেলের জায়গা। গুল্মাস আপেলের স্বাদ মুখে লেগে থাকার মতো। লোকাল ফুডের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো Kashimiri Wazwan। বড় থালায় ভাতের চারপাশে হরেক রকম কাবাব আইটেম সাজানো থাকে। সাথে আলাদা বাটিতে থাকে Rishta (মিট বলের মতো দেখতে), Gustaba (এটাও মিট বলের মতো দেখতে), Rogan Josh (খাসির মাংসের সাথে লাল ঝোল)।চার জনের জন্য বললেও অনায়াসে ছয় জন খাওয়া যায়। Wazwan খাবার জন্য সেরা জায়গা হলো Residency Road, Ground Floor এর Mughol Dorbar. এছাড়াও রেসিডেন্সি রোডের কাশ্মীরি কাবাব মিস করার মতো না। মাটন শিক কাবাব সাথে রুমালি রুটির মতো পাতলা রুটি স্বাদ অতুলনীয়।

এবার আসা যাক ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ে। এবারের যাত্রা পর্বতমালা সমৃদ্ধ লাদাখ। লাদাখ যাবার রাস্তা তিনটা. এক: প্লেন সেটা যে কোনো জায়গা থেকে যাওয়া যায়, দুই:মানালি থেকে রোথাং পাস্ হয়ে লেহ, তিন: শ্রীনগর থেকে কার্গিল হয়ে লেহ। শ্রীনগর থেকে লেহ এক দিনেও যাওয়া যায় কিন্তু সেটা না করে ভালো। কারণ রাস্তা ক্রমশ সর্পিলভাবে উপরের দিকে উঠবে যার জন্য acclimatization প্রয়োজন। কার্গিল শ্রীনগর আর লেহর মাঝামাঝি জায়গায় হওয়াতে সকালে শ্রীনগর ছেড়ে বিকালের মধ্যেই কার্গিল পৌঁছানো যায়। আর পরদিন সকালে কার্গিল থেকে রওনা হয়ে দুপুরের মধ্যেই লেহ পৌঁছে যাওয়া যায়। এতে শরীরের ক্লান্তি সহনীয় পর্যায়ে থাকে। লেহ পৌঁছানোর পর সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়া অত্যন্ত জরুরি। আর জরুরি প্রচুর পানি পান করা। অনেক উচ্চতায় স্বাস-প্রস্বাসের সমস্যা দূর করতে এটা দরকার। পরদিন লেহ সাইটসিইং করা ভালো কারণ ওই দিনের আগে permit জোগাড় করতে পারবেন না। লেহ’র আশেপাশে ঘোরার জন্য কোনো permit-এর প্রয়োজনে হয়না কিন্তু লেহ’র প্রধান ট্যুরিস্ট স্পট নুব্রা ভ্যালি (তুরতুক, হুন্ডার), 3 idiots খ্যাত প্যাংগং লেক যাবার জন্য permit লাগে। এটা শুধু যে বাংলাদেশিদের জন্য লাগে তা না ভারতীয়দেরও internal permit নিতে হয়। লেহ পৌঁছনোর দিনই হোটেলে পাসপোর্ট আর কোথায় কোথায় যেতে চান বললে ওরা আপনাকে পরদিনই permit এর ব্যবস্থা করে দেবে জনপ্রতি ৭০০ রুপি খরচে। এটা নিজে করা যায়না লোকাল ট্যুর অপারেটর-এর মাধ্যমে করতে হয়। লেহ-তে দেখার মতো আছে তিনটা মনাস্ট্রি (Shey Palace, Hemis Monastry, Thiksey Palace), 3 idiots খ্যাত Druk White Lotus School, Shanti Stupa যেখান থেকে পুরো লেহ দেখা যায়।৫০০ খাড়া সিঁড়ি চড়তে না চাইলে আপনি গাড়ি ভাড়া করে উপরে যেতে পারেন! Magnetic Field শ্রীনগর থেকে লেহ আসার পথেই পড়বে। Gurdwara Patthar Sahib ও চাইলে দেখতে পারেন।নুব্রা ভ্যালি (তুরতুক, হুন্ডার) ঘুরতে ৩ দিনের জন্য গাড়ি রিসার্ভ করতে হবে। ৪/৬ জন হলে পুরো গাড়ি রিসার্ভ করা ভালো আর কম লোক হলে হোটেলে বললে ওরাই শেয়ার ট্যাক্সির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। লেহতে থাকা আর ঘুরার ব্যবস্থার জন্য সেরা জায়গা হলো Rainbow Guest House। Permit পাবার পরদিন আমরা ২ রাত ৩ দিনের জন্য ১২০০০ রুপিতে ট্যাক্সি রিসার্ভ করে হুন্ডার ছাড়িয়ে আরো অনেক দূরে তুরতুক চলে গেলাম। লেহ থেকে নুব্রা ভ্যালি যাবার পথে পড়বে খারদুং লা পাস, যেটা লাদাখ দাবি করে World’s Highest Motorable Road (18,380 Ft)। খারদুং লা পাস-এ যখন গাড়ি থেকে নামবেন তখন অনুভব করবেন যে নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। ১৮৩৪০ ফুট উচ্চতায় যেটা খুব স্বাভাবিক। দুপুরের মধ্যেই তুরতুক পৌঁছে গেলাম। তুরতুক হলো লাদাখের শেষ গ্রাম যার ২০০ মিটার-এর মধ্যে পাকিস্তান বর্ডার। তুরতুক এককালে পাকিস্তানের বালতিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে কারণেই লাদাখের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তুরতুকে ১০০% মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তুরতুক খুব সুন্দর পরিচ্ছন্ন পাহাড়ঘেরা একটি গ্রাম। ৫০০ বছরের পুরোনো একটা মসজিদ আছে। এছাড়া মিউসিয়াম যেখানে তুরতুক-এর প্রথম শাসক থেকে পর্যায়ক্রমে সব লিপিবদ্ধ করা আছে। ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হলো যিনি এই পারিবারিক মিউসিয়াম দেখা শোনা করেন তিনি ওই বংশের শেষ বংশধর! এক রাত ওখানে কাটিয়ে পরদিন ফেরত আসলাম হুন্ডার। হুন্ডার খ্যাত হলো Sand Dunes আর Bactrian Double Humped Camel-এর জন্য। হুন্ডার গেলে অবশ্যই camel ride মিস করবেন না। যদিও অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হয় সিরিয়াল পাবার জন্য। আমরা আধ ঘন্টার রাইড নিয়েছিলাম ৩৫০ রুপিতে। হুন্ডারে থাকার জন্য সর্বোত্তম জায়গা হলো Tent। এই অভিজ্ঞতা হুন্ডার আর প্যাংগং লেক ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যাবেনা। যদিও হোটেল বা গেস্ট হাউস এর চাইতে অনেক সস্তায় পাওয়া যাবে তবুও Tent-এ থাকার অভিজ্ঞতার তুলনায় সেটা খুব নগন্য। আমরা ছিলাম Nubra Boutique Camp-এ। অফ-সিসন হাতে ১৫০০ রুপি সকাল আর রাতের খাবার সহ পেয়ে গেছিলাম যেটার ভাড়া ২৫০০-২৮০০ রুপি। পরদিন লেহ চলে আসলাম হুন্ডার থেকে। ফেরার পথে Diskit Monastery দেখে আসলাম। অনেক বড় monastery এটা।

লেহ ফিরে রাত কাটিয়ে পরদিন চলে গেলাম প্যাংগং লেক দেখতে। প্যাংগং লেক-এ রাতে না থাকলেও চলবে। দিনে দিনেই দেখে আসতে পারবেন। Tso Moriri লেক আরেকটা জায়গা যেটা নাকি প্যাংগং লেক-এর চাইতেও সুন্দর। সময় স্বল্পতার জন্য আমরা ওখানে যেতে পারিনি। প্যাংগং লেক Spangmik গ্রামে অবস্থিত। লেহ থেকে spangmik যাবার পথে Chang La Pass পার হতে হয় যেটা ভারতের দাবি অনুসারে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম যান চলাচলের রাস্তা (১৭,৬৮৮ ফিট)। প্রায় পাঁচ ঘন্টা লাগে লেহ থেকে প্যাংগং পৌঁছাতে। রাস্তা অত্যন্ত খারাপ আর আঁকাবাঁকা হওয়ায় যেতে যেতেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে হয়। তবুও দূর থেকে প্যাংগং-এর হালকা থেকে গাঢ় নীলাভ পানির সমান্তরাল রেখা পথের ক্লান্তি দূর করে দেয়। মনে চলে আসে “All izz well”

Post Copied From:Anirban Haq‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment