ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ঘাগুটিয়ার পদ্মবিলে গোলাপি পদ্মের মেলা

এক গুচ্ছ পদ্মফুল হাতে এনে দিলে কার না মন প্রফুল্ল হয়ে উঠবে! বিলে ফুটে থাকা অজস্র পদ্মের সৌন্দর্য আসলেই অপার্থিব। আমাদের চিরায়ত গ্রাম বাংলার অন্যতম মনভোলানো দৃশ্য এটি । গানে, কবিতায় অসংখ্য বার নীলপদ্মের কথা বলেছেন কবিরা। নীলপদ্ম হয়ত চাইলেই পাওয়া যাবেনা, তবে গোলাপি পদ্মের সৌন্দর্যে আপনি চাইলেই মুগ্ধ হতে পারেন। হ্যাঁ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘাগুটিয়ার পদ্মবিলে আপনি দেখতে পাবেন অগণিত পদ্মের মেলা। ইচ্ছেমত মনভরে তুলতে পারবেন পদ্মের গুচ্ছ। এ যেনো ঠিক পদ্মফুলের গালিচা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন এই পদ্মবিল থেকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া। আর ওপারেই ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরার আমতলী থানার মাধবপুর গ্রাম। বাংলাদেশ-ভারতের এই দুটি গ্রামের মাঝখানেই এই বিশাল পদ্ম বিলের অবস্থান। প্রতিবছর আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ১২০ একর বিস্তীর্ণ এ বিলে পদ্ম ফুল ফোটে। আষাঢ় মাসে থেকে পদ্ম ফোটা শুরু হয় একটানা কার্তিক মাস পর্যন্ত পুরো পাঁচ মাস পদ্ম ফুলে রঙিন থাকে এই পুরো পদ্ম বিল। বিল থেকে পানি নেমে গেলে ধীরে ধীরে পদ্মও এই বিল থেকে উধাও হয়ে যায়। বাকি সময়টুকুতে এখানে বোরো ধানের চাষ হয়।

ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল

এই বিলে লাখো লাখো পদ্ম ফুলের সমাহার দেখা যায়। সাধারণত সকাল বেলা পদ্ম ফুলের সংখ্যা থাকে সবচেয়ে বেশি। গ্রামবাসীরা প্রচুর পদ্মফুল সংগ্রহ করে তাই আপনি চারপাশে পদ্ম ফুলের ভাঙ্গা ডাল ছড়িয়ে থাকতে দেখবেন। বিলে নৌকা ভ্রমণের সময় আপনি পদ্ম ফুল এবং পদ্ম ফল সংগ্রহ করতে পারবেন। হাত ভর্তি পদ্মফুল পেয়ে আনন্দে আটখানা হতে কার না ভালো লাগবে। পুরো বিল শুধু পদ্ম ফুলই নয় ,বিভিন্ন ধরনের জলজ ফুল যেমন শালুক ফুল, চাঁদমালা ফুলে ছেয়ে থাকে। বর্ষায় যেনো বিলে আসন পাতে শত শত পদ্ম ফুল। শত একর বিলজুড়ে জলে ভাসতে থাকে পদ্মের দলেরা। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে, কেউ বা আসে ছবি তুলতে। কেউ আবার ডিঙি নৌকায় চড়ে গিয়ে তুলে আনে গোছা গোছা পদ্ম। এ যেন প্রকৃতি প্রেমীর এক অন্য রকম স্বর্গ। সাদ-গোলাপী এই পদ্মার গালিচায় ভাসতে ভাসতে কখন যে বেলা ফুরিয়ে আসে টেরই পাওয়াই মুশকিল। এত বড় পদ্মের বিলের দেখা মেলা আসলেই ভার।

এই বিলের পাশে অবস্থিত ভারতীয় সীমান্ত খুব সহজেই দেখা যায়। এই বিলের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশে থাকলেও বাকি অংশ পড়েছে ভারতের অংশে। শুষ্ক মৌসুমে বিলের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। আবারো বর্ষাকাল আসলে এই বিলটি পদ্ম এবং অন্যান্য জলজ ফুলে ভরে উঠে।

ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল

এ বিলের অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে বিনোদন-প্রিয় হাজারো মানুষ। পদ্মবিলে ঘুরার জন্য নৌকাগুলো ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়। নৌকা ভাড়া দিয়ে বাড়তি কিছু টাকা আয় করে স্থানীয়রা। দর্শনার্থীরা বিলের পাড়ে বসে পদ্মের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রতিনিয়ত ভিড় জমান।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা দেবীর পূজায় কাজে লাগে এই পদ্ম ফুল। সে জন্য আশ্বিন মাসে এ বিল থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মানুষ প্রচুরসংখ্যক পদ্ম ফুল সংগ্রহ করে থাকে। ভারতের স্থানীয় বাজারে এসব পদ্ম বিক্রিও হয়। শিশু-কিশোরেরা ডিঙি নৌকায় করে ফুল তুলে আনে এই বিল থেকে। এছাড়া ফুটন্ত ফুলের ভেতর থাকা ফল খায় শিশুরা। আবার এই ফুল চার থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রিও করে তারা। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ ফুল তোলে শিশুরা।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে ট্রেনে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন। ভাড়া ট্রেন ও শ্রেণিভেদে ৬৫ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। স্টেশনে নেমেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় পৌঁছা যাবে বিল ঘাগুটিয়ায়। অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে নিলেই ভালো। কেননা ঘাগুটিয়া এলাকায় অটোরিক্সা নিয়মিত পাওয়া যায় না।

যেখানে থাকবেন:

আখাউড়াতে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নাইন স্টার আবাসিক হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, রংধনু আবাসিক হোটেল, হোটেল দীপ্তি রেস্ট হাউজ (আবাসিক), হোটেল সবুজ রেস্ট হাউজ,হোটেল ভাই ভাই রেস্ট হাউজ, হোটেল বনানী রেস্ট হাউজ, হোটেল টাওয়ার প্লাজা ইত্যাদি।

Share:

Leave a Comment