খুম খুম নাফাখুম….নাফাখুম…নাফাখুম

ইউটিউব এ একের পর এক ভিডিও দেখার পরই নাফাখুম এর প্রেমে পড়ে যায়।তখন সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল।পড়ার ফাকে ফাকে ইউটিউব এ ঢুঁ মারাটা ই যেন নেশা হয়ে যাচ্ছিল।মনে মনে ভাবছিলাম বাংলাদেশের মানচিত্রে এত ভয়ংকর সুন্দর জায়গাও আছে।আর আমি এমনিতেও ভ্রমণ পিপাসু।যাইহোক অনেক দূরের পথ!একা একা তো আর যাওয়া যাই না তাই মনে মনে সঙ্গী খুঁজতে লাগলাম।আর আল্লাহর রহমতে সঙ্গী হিসেবে পেলাম আমার জীবনের সেরা ৭ জনকে।সব পরিকল্পনা শেষ।এখন শুধু পরীক্ষা শেষ আর ফরমালিটি ভাইভা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা।পরীক্ষা শেষ ১১তারিখ।আর ভাইভার তারিখ জানালো ১৩ই ডিসেম্বর ২০১৭।মনে খুশি আর ধরে না!!ডিসিশন নিয়ে নিলাম ১৩ তারিখ রাতেই রওয়ানা হবো।আমি বেশি excited ছিলাম ত তাই মাঝখানের ২ রাত আর ঘুমই আসে না।আহারে আহারে কবে যাব পাহাড়ে!!!আগের দিন গিয়ে টিকিট কাটি।সিজন হওয়ায় টিকিট পাওয়াটা ঝামেলাই হয়।অনেক কষ্টে হানিফ পরিবহনের ৭ টা টিকিট পাই।ও হ্যা আমাদের মধ্যে ৪জন ছেলে আর ৩ জন মেয়ে ছিল।প্রথমে একটু ভয় কাজ করছিল।কিন্তু কথায় আছে বন্ধুত্ত্বে ভয়কে করো জয়।যাই হোক রাত ১০ টায় আমাদের বাস ছাড়ল সায়েদাবাদ থেকে।সকাল ৬.২০ এ আমরা বান্দরবন পৌছালাম।হোটেল ঠিক করে নাস্তা শেষ করে একটা জিপ রেডি করলাম সারাদিন শহরের আশে পাশে ঘুরার জন্য।১ম দিন:-রামজাদিবৌদ্ধ মন্দির,স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল ঘুরা শেষ করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসলাম।রাতে ডিনার শেষ করে বার্মিজ মার্কেটে একটু ঢুঁ মারলাম।আর সাথে পরদিন নাফাখুম যাওয়ার জন্য থানচির উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়ি ঠিক করে নিলাম।কথা হলো আমাদের যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি দেখিয়ে নিয়ে যাবে।হোটেলে এসে দিলাম ঘুম।
দিন ২:-সকাল ৬ টায় চান্দের গাড়ি আসল আমাদের নিতে।আমরা রওয়ানা হলাম।আমাদের মেইন টার্গেট যেহেতু নাফাখুম তাই মাঝখানের জায়গাগুলোতে বেশি সময় নষ্ট করি নাই।সকাল ১১ টার মধ্যে আমরা থানচি পৌছে যায়।ও হ্যাঁ নীলগিরি পার হবার পর থানচি যাওয়ার রাস্তাটা just ভয়ংকর ভয়ংকর সুন্দর!!আমরা থানচি পৌছে নৌকা রেডি করে ফেলি।যেহেতু আমরা ৭ জন ছিলাম তাই ২ টি নৌকা নেয়া লাগছে কারন এক নৌকায় ৫ জনের বেশি বিজিবি উঠতে দেয় না।শুরু হল আল্লাহর অপরূপ সাজানো বাগান দেখা।নৌকা চলে ২ পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে।কখনোও আবার বড় বড় পাথরের ফাকঁ দিয়ে।নৌকার রাস্তাটুকু এক কথায় অস্থির।২ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা রেমাক্রি বাজার পৌছে যায়।আমাদের নৌকার মাঝিই আমাদের গার্ডের দায়িত্ত্বে ছিল।ও আমাদের জন্য রাতে থাকার এবং খাবার জন্য কটেজ(উপজাতিদের তৈরি কাঠের ২ তালা ঘর) রেডি করে। (জনপ্রতি থাকা ১৫০ আর খাবার একবেলা ১২০ফিক্সড)।ঐ রেমাক্রি বাজার থেকে নতুন গাইড ধরে নাফাখুম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা শুরু ১ টায় সাথের জিনিস পত্র কটেজে রেখে।যেহেতু আমাদের সাথে মেয়ে ছিল তাই হাটার গতি কিছুটা শিথিল ছিল।শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং।পাহাড় পেরিয়ে খালের কিনারা ঘেষে আমরা হাটতে থাকলাম।এখন শীতকাল তাই রাস্তা বেশি ভয়ংকর না কিন্তু পরিবেশটা ভয়ংকর সুন্দর!যাওয়ার পথে ২ বার পানি পাড় হতে হয়।খুব সাবধনে কারণ পাথুরে রাস্তা হওয়ায় খুব পিচ্ছিল।যাই হোক আমরা ৩.৩০ মিনিট এর মধ্যেই পৌছে যায় সেই কল্প-বাস্তবতায় যা কিনা কত রাত আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিছিল।কত রাত আমি সপ্নের মধ্যেই চলে যেতাম ঐ জায়গায়।সৌন্দর্য কি বলব!! এক কথায় expectation এর চেয়ে ১০০ গুন উপরে।ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়!দিনের দৈঘ্য ছোট হওয়ায় আমরা মাত্র ১৫ মিনিট সেখানে ছিলাম।গোসল করার সৌভাগ্য হয়নাই।আমরা রওয়ানা দিলাম।৩.৪৫ এ।৬.৩০ এর মধ্যেই আমরা কটেজে পৌছে গেলাম।রাতের কাহিনী পুরুই আমাদের অবাক করে দিয়েছে।আমার মনে হয় না এত দুর্গম জায়গায় এত ভালো থাকা আর খাওয়ার প্রত্যাশা কেউ করতে পারে।রাত কাটিয়ে সকালে ১৬ই ডিসেম্বর।(কিছু কথা শেষে লিখব বিজয় দিবস নিয়ে ওদের উদযাপন)।আমরা ৯.৩০ এ আমাদের নৌকায় চড়ে রওয়ানা দিলাম থানচির উদ্দেশ্য।যাওয়ার সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে।যদিও সাংগু নদীর অনূকূলে যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য।আমাদের মাঝিগুলা খুব সু্ন্দরভাবে ই নিয়ে গেছেন।হালকা কুয়াশা।পাহাড়ের বুকে মেঘ আটকে থাকা,রাজা পাথর দেখে,বড় পাথর দেখা,পাথরে দাড়িয়ে ছবি তুলা মানে awesome.তবে ভূলেও কেউ রাজাপাথরে উঠে ছবি তুলবেন না।স্থানীয়রা অনেক সমীহ করে চলে। আমরা ১১.৩০ এ থানচি বাজারে পৌছে যাই।সেখান থেকে বান্দরবনের গাড়ি ঠিক করি।চান্দের গাড়ি।মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ি আনারসের টেষ্ট নেয়া থেকে কেউ বন্ঞ্চিত হবেন না।২.৪৫ এ আমরা বান্দরবন শহরে পৌছে যায়।ঢাকার বাসের জন্য যাই।বাস রাতের ৮ টায়।আমাদের হাতে enough সময় আছে।দুপুরের খাবার খেয়ে ২য় বারের মতো চলে যাই নীলাচলের সূ্র্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে।৭ টায় আমরা কাউন্টারে এসে রাতে খাওয়ার জন্য খাবার কিনে বাসে উঠে পড়ি।ভোর ৪ টায় আমরা সায়দাবাদ পৌছে যায়।
.
.
ট্যুর প্লান:
ঢাকা-বান্দরবান(রামজাদি বৌদ্ধমন্দির, স্বর্ণমন্দির,মেঘলা,নীলাচল,মিলনছরি,শৈলপ্রপাত,চিম্বুকপাহাড়,নীলগিরি)-থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-ঢাকা
.
.
সময় লেগেছে:-
৩দিন ও ২রাত(যাওয়া আসার রাত ছাড়া)
.
.
খরচ পড়েছে:-
মাথাপিছু ৫৫০০
নৌকা+গাইড(তাইজুল:-০১৮২৩৬৭৯২৪০)
.
.
(আমার সম্পূর্ণ নিজের অভিমতে নিচের লেখাটি লিখলাম।দয়া করে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে নিবেন না:-
.
.
উপজাতি ও বিজয় দিবস
এতো গভীরে মানুষ থাকতে পারে তা যখন চিন্তা করাই কঠিন সেখানে সবাইকে তাক লাগিয়ে ঐ মানুষ গুলোই এতো সুন্দরভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে।আমি হতবাক।যেখানে তারা বেচেঁ থাকার জন্য রাতদিন সংগ্রাম করে।একটি দেশের নাগরিকের সুবিধা ত দূরে থাক যেখানে কিনা বিদ্যুত,মোবাইল নেটওয়ার্ক ই পৌছায়নি সেই তারাই বাংলাদেশের ৪৬ তম বিজয় দিবসকে চমৎকারভাবে পালন করছে।আর আমাদের মত মানুষ গুলো রাষ্টীয় দিবস গুলো ঘুমিয়ে কাটাচ্ছি।তাদের দেখে মনে হয় সমস্ত স্বাধীনতা আমাদের দেয়া হয়েছে আর আমরা তা মূল্যই দিচ্ছি না।সেলুট তাদের।তাদের ব্যবহার অতুলনীয়।একবার কাছ থেকে ওদের জীবনটা দেখে আসুন আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যাবে।আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শোকরিয়া আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে।উপজাতিরাও মানুষ।

Post Copied From:RI Rahad‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment