কাপ্তাই ১ দিনের ভ্রমণ ট্যুর ও খরচাবলী
অনেক দিন কোথাও ঘুরে যাওয়া হয় নাই। একটু রিফ্রেশ এর জন্য জায়গা খুজছিলাম। (tob) এর কল্যাণে পেয়ে গেলাম কাপ্তাই এর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা । ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই কে জানাই দিলাম। এর মধ্যে ৫ জন সদস্য পাইলাম যাওয়ার জন্য।
আমাদের প্ল্যান ছিল কায়াকিং + নৌকা ভ্রমণ করব। ২০ এপ্রিল,শনিবারে ভ্রমণ এর ডেট ঠিক করি।আমার সবাই চট্টগ্রামের ছিলাম।চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই যেতে হলে বহদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে যাওয়া যায়। বাস স্টেশন থেকে ১৫মি পর পর কাপ্তাই এর বাস ছাড়ে ভাড়া ৬৫ টাকা।আমাদের প্ল্যান ছিল সকাল ৮ টা বাজে গাড়িতে উঠবো ১০ টা করে কাপ্তাই নামবো ।তা আর হইলো না সবাই ৮ টায় বাস স্টেশনে চলে আসলেও ১ জন এর কোন খবরই নাই। সবাই মন খারাপ হয়ে যায় এমনিতে সদস্য কম এর মধ্যে আরো একজন কম। সবাই কল করে ও তার সারা পাই না। আমারা গাড়ির উঠার একটু আগে তার কল আসে, কল দেখে অনেক খুশি ও রাগ দু ই ছিল।অই পার থেকে বেশে আসতেছে “দুস্ত সরি” মাথা ১০০ তে ১০০ গরম, রাগটা কন্ট্রোল করে তাড়াতাড়ি করে যে আসতে বললাম।আমার ৪ জন বাস স্টেশন কাউন্টার এর পাশে নাস্তা করলাম।পরতা আর চা খেলাম বিল আসছিল ৪ জনের ৬১ টাকা। যারা সকাল সকাল বের হবেন নাস্তা করে না আসলে তারা স্টেশন এ নাস্তা করতে পারেন।বাস স্টেশনের কাউকে বাশঁখালী কাউন্টার কোথায় জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দিবে,এর সামনে হোটেলটা। নাস্তা করে নিলে ভালো ২/৩ ঘন্টার যাত্রাপথ কাপ্তাই যেতে। আমাদের সেই মহান বন্ধু আসলো। কাপ্তাই এর গাড়ি ছিল কিন্তু যাত্রী ছিল না। লিচুবাগানের গাড়ী ছিলো পাশে। কাপ্তাই যাওয়ার আগে লিচুবাগান পরে ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা।কাপ্তাই যাইতে হলে লিচুবাগান এর গাড়ি গুলোতে করে যাওয়া ভালো, গাড়ি কাপ্তাই এর বাস গুলো থেকে অনেক ভালো। ৯:২০ এ গাড়ীতে উঠি সৌভাগ্যর দোষে আমাদের পেছেনের সিট মিলে।কিন্তু রাস্তা ভালো থাকায় সমস্যা হয়নাই।৯:৩০ এ গাড়ী ছাড়ে গাড়ীতে খাওয়ার জন্য মহান লেট বন্ধু ২ টা ৫০০মি কোক আর সমুচা নিল সবার জন্য খরচ ১০০ টাকা। রাস্তার দুইপাশে সবুজ গ্রাম দেখতে দেখতে ১১ টার মধ্যে লিচুবাগান স্টেশন এ পৌছে যায়।
গাড়ী থেকে নেমে ৩ টা চিপস নিলাম ৪৫ টাকা দিয়ে।লিচুবাগান মোড়ে অনেক CNG আছে কাপ্তাই যাওয়ার। লিচুবাগান থেকে কাপ্তাই এর ভাড়া ৩০ টাকা করে CNG প্রতি জন।যারা কায়াকিং করবেন তারা জুম রেস্তোরাঁয় জন্য CNG নিবেন ১০০/১৫০ টাকা দিয়ে, আমরা ১৫০ টাকা দিয়ে ঠিক করি।৩০ মিনিট মত লাগে পৌঁছাতে, যাওয়া সময় রাস্তার ২ পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে মন ফ্রেশ হয়ে যায়, উঁচু নীচু রাস্তা যা পাহাড়ের পাশ কেটে চলে যাচ্ছে দূরদূরান্তের। জুম রেস্তোরাঁর সামনে কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাব CNG চালকরে বললে সে নামায় দিবে।নামার সাথে সাথে পিক, সেল্ফি। একপাশে কাপ্তাই লেক আর এক পাশে পাহাড় ২ টায় দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।কায়াক ক্লাব এর নিচে নেমে ও পিক তুলা শেষ হয় না।আমার ৫ জন এর মধ্যে ২ জন মেয়ে ও ছিল তারা সাতার জানে না ভয়ে করতে চাইতেছে না কায়াকিং। আবার লোভ ও সামলাতে না পেরে রাজি হয়ে যায় ।৩ টা কায়াক বোট নিলাম। ২০০ করে রাখলো স্টুডেন্ট বলে। এমনি তে ২৫০,যাওয়ার সময় স্টুডেন্ট আইডি কাড নিয়ে যাবে ৫০ টাকা ডিস্কাউন্ট পাবেন।আমরা নিয়ে গেছিলাম ৬০০ দিয়ে ৩ টা বোট নিলাম এক বোট এ ২ জন করে বসা যাবে।আমাদের মধ্যে একজন আগে করেছিল কায়াকিং সেই ১ টা নিয়ে চলে গেলো আর বাকী ২ টা ২ জন করে বসে পরলাম । সবাই কে লাইফ জেকেট পরতে হবে আর ওরা যা নিয়ম বলবে সেই নিয়মে করবেন।কায়কে দাড়ানো যাবে না কায়াক করার অবস্থায় নামা যাবে না বোট থেকে, নাইলে ১০০০ টাকা জরিমানা করবে।১ ঘন্টা কায়াকিং টা ছিল অনেক অনেক অসাধারণ মুহূর্ত পাহাড়ের মাঝে কায়াকিং করা।পুরো ১ ঘণ্টা কায়াকিং করলাম ১ মিনিট ও ছাড় নাই।কায়াকিং করে অনেক খিদে লাগছে সবার, কায়াক ক্লাব এর ২ পাশে ২ টা রেস্তোরাঁ আছে।আমরা ডান পাশে ফ্লোডিং প্যরাডাইস রেস্তোরাঁতে যায়।ভাত, ডাল ৪০ টাকা, আর দেশী মুরগী ১৩০ টাকা এক পিছ। ৫ জনের খাবার এবং সাথে ১ লিটার সেভেন আফ ৯৪৫ টাকা বিল আসলো হোটেল আংকেল ৯০০ টাকা রাখছে।রেস্তোরাঁ থেকে কাপ্তাই লেক ভিউ অনেকে সুন্দর ছিলো। কিছুক্ষণ রেস্তোরাঁয় সময় কাটালাম লেক দেখে।এর পর জেটিঘাট যেতে হবে জুম রেস্তোরাঁ সামনে হেটে চলে যাবেন ওইখানে CNG রয়েছে ১ জন ২০/২৫ টাকা করে জেটিঘাট।CNG চালক ২৫০ বলেছিল ১০০ দিয়ে রিজার্ভ করি।
কাপ্তাই এ যতই বিতরে যাবেন তত সৌন্দর্য দেখতে পাবেন ।রাস্তার পাশে অনেক পার্ক, জাতীয় উদ্যান,ঘুরার স্পট আছে যারা সময় নিয়ে যাবেন ওই গুলো ঘুরে দেখবেন।যারা রাত কাটাবেন তারা প্রশান্তি পার্কে থাকতে পারবেন। আমারা জেটিঘাট গিয়ে একটা নৌকা ঠিক করি ঘন্টায় ১৫০ টাকা, সদস্য বেশি হলে ইঞ্জিন চালিত সাম্পান নিবেন ১০০০ টাকা করে ১ ঘন্টায়।ওরা আপনাকে কাপ্তাই বিদুৎ কেন্দ্র,কাপ্তাই বাধ, লেক ভিউ ও দেখাবে চাইলে লেক ভিউতে নামতে পারেন ১০০ টা এন্টি ফি।আমাদের ইচ্ছা ছিল না তাই যায় নাই। লেক এর পানি খুব পরিষ্কার আর সবুজ রঙের ছিল।লেকে নৌকা রাইড দিয়ে অনেক ভালো লাগলো।যে পরিমাণ আনন্দ পেলাম সে হিসেবে টাকাটা অনেক কম মনে হয়েছে। যারা লেক এর পানিতে গোসল করতে চান করতে পারবেন। আমাদের ১ জন এক্সট্রা কাপড় আনছিল বাকিরা আনে নাই তাই করা হলো না। নৌকা ভ্রমণ শেষ এই বার ফেরার পালা।শনিবারে ওইখানে হাট বসে চাইলে কিছু কিনতে পারেন, দাম কম তুলনামূলক। জেটিঘাট থেকে লিচুবাগান ১৭৫ টাকা CNG তে।লিচুবাগান নেমে একটা দোকানে ঢুকে নাস্তা করলাম। কেক, ঠান্ডা 7up ৪ জন, চা খেলো ১ জন ১১০ টাকা।লিচুবাগান থেকে বহদ্দারহাট বাস স্টেশন ৪৫ টাকা ভাড়া। আসার সময় ঘুমায়ছি গাড়িতে।শহরে নামায় দেয় আমাদের ৫:৪০।
এইবার আসি খরচ এর কথায় :
*সকালের নাস্তা ৬১+১০০ = ১৬১ টাকা
*বহদ্দারহাট টু লিচুবাগান ভাড়া ৪৫*৫ = ২২৫ টাকা
*চিপস ৪৫ টাকা
*লিচুবাগান টু কায়াক ক্লাব রিজার্ভ ১৫০ টাকা
*কায়াকিং ৩ বোট ৬০০ টাকা
*দুপুরের খাবার ৯০০ টাকা
*কায়াক ক্লাব টু জেটিঘাট রিজার্ভ ১০০ টাকা
*নৌকা ভ্রমণ ১৫০ টাকা
*জেটিঘাট টু লিচুবাগান রিজার্ভ ১৭৫ টাকা
*বিকালের নাস্তা ১১০ টাকা
*লিচুবাগান টু চট্টগ্রাম শহর ৪৫*৫= ২২৫ টাকা
মোট ৫ জনের খরচ (১৬১+২২৫+৪৫+১৫০+৬০০+৯০০+১০০+১৫০+১৭৫+১১০+২২৫=২৮৪১ টাকা)
প্রতি জনের খরচ হবে (২৮৪১/৫= ৫৬৯) টাকা
★★ ৬০০ টাকায় ১ দিনের ট্যুর হিসাবে আমাদের অনেক ভালো লেগেছে।
বি দ্রঃ কাপ্তাই এলাকা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।আমাদের সবার দরকার আমাদের দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা।যেখানে ঘুরতে যাবেন ময়লা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।dustbin এ ফেলবেন।dustbin আশে পাশে না থাকলে একটা পলিথিন এ রেখে ব্যাগ এর একপাশে রাখুন।dustbin দেখলে অইকানে ফেলবেন।