গোলাপগ্রাম – Ville de Fluir

ঢাকার অদূরে ছিমছাম প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠা সাদুল্লাহপুর গ্রামটি গোলাপগ্রাম হিসেবে পরিচয় পাচ্ছে অনেক ভ্রমণপ্রেমীর কাছে ।
শুধু নামে নয়,আক্ষরিক অর্থেই একে গোলাপগ্রাম বলা যায় ।
কারণ আস্ত একটা (বা একাধিক ) গ্রামে বিস্তীর্ণ ক্ষেতের পর ক্ষেত জুড়ে চাষ হচ্ছে অজস্র গোলাপফুলের ।
সে সাথে স্বল্প পরিসরে অন্য আরো কিছু ফুল এবং ফুলকপির :p
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু মুক্তি নিয়ে ফুসফুসটা নির্মল ধূলোহীন হাওয়ায় ভরে নিতে যেতে পারেন গোলাপগ্রামে ।
আমাদের বন্ধুদের গতসপ্তাহের ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় কিছু কথা বলছি ।
গোলাপগ্রামের বিভিন্ন পোস্ট টিওবিতে সম্প্রতি প্রচুর করা হয়েছে ।
তাই কিভাবে যাবেন কী খাবেন ইত্যাদি কমন এবং বহুল আলোচিত অংশটুকু স্কিপ করে সরাসরি পড়তে পারেন Point to be Noted অংশটুকু ।
.
কিভাবে যাবেন –
রুট ১ – মিরপুর,ধানমন্ডি , নবীনগর বা চন্দ্রা থেকে বাসে আসতে পারেন CMB . এটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্টপেজ আগে ( ঢাকার দিক থেকে ) ।
দলে ভাড়ী থাকলে CMB থেকে ইজিবাইক রিজার্ভ নিতে পারেন । সরাসরি গোলাপগ্রামে ২৫০ টাকা । ৮ জন বসতে পারবেন ।
এছাড়া সিএনজিও নিতে পারেন ।
আর যদি আমার মতো একা হন , তাহলে ফলো মি-
CMB – ইজিবাইকে চারাবাগ ( ১৫ টাকা ) – ইজিবাইক বা লেগুনায় আকরান বাজার ( ৫ টাকা ) – রিকশা বা ইজিবাইকে গোলাপগ্রাম ( রিকশায় ৪০ টাকা , ইজিবাইকে সম্ভবত ২০ টাকা )
রুট ২ – যারা চৌরাস্তা বা উত্তরার আশেপাশে থাকেন , প্রথমে চলে আসুন আব্দুল্লাহপুর । আর ধানমন্ডি, ক্যান্টনমেন্ট,মিরপুরওয়ালা চলে আসুন মিরপুর ১ এ ।
এবার আব্দুল্লাহপুর থেকে বেঁড়িবাধ ভায়া মিরপুরগামী বাসে উঠুন বা মিরপুর থেকে বেঁড়িবাধ ভায়া আবদুল্লাহপুরগামী বাসে উঠুন ।
নেমে পড়ুন বিরুলিয়া বেঁড়িবাধের ৩ রাস্তার মিলনস্থলে ।
এখান থেকে ইজিবাইকে সরাসরি গোলাপগ্রাম বা প্রথমে আকরান বাজার,তারপর গোলাপগ্রাম ।
গোলাপগ্রাম থেকে সরাসরি ব্রিজের গোড়ায় নামিয়ে দিয়েছিলো । ভাড়া ২০০ টাকা । ৮ জন বসতে পারবেন । আমরা অবশ্য ৯ জন বসেছিলাম । :p
আমরা ফিরে আসার সময় এই রুটটা ব্যবহার করেছি ।
যাওয়ার সময়েও হিসাবটা একই হবার কথা ।
তবে আমি ফিরতি পথে বিকেলে বেঁড়িবাঁধে কোনো সিএনজি-ইজিবাইক দেখিনি । সন্ধ্যা দেখে ছিলো না, নাকি থাকেই না সেটা বলতে পারছিনা । এটা একটু মাথায় রাখবেন ।
.
এতোক্ষণ কি কিছু মিস করছিলেন ? Here we go! 😀
রুট ৩ – গোলাপগ্রামে যাওয়ার এটা সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট ,কারণ ট্রলার ভ্রমণের আনন্দ !
এর জন্যে প্রথমে চলে আসুন মিরপুর ১ । সেখান থেকে আলিফ,মোহনা বা লেগুনাযোগে আসুন দিয়াবাড়ি বটতলা ট্রলার ঘাটে (৫ টাকা ) ।
সেখান থেকে ট্রলারযোগে সরাসরি সাদুল্লাহপুর ( জনপ্রতি ২৫ টাকা )- তারপর অটোতে গোলাপগ্রাম (১০ টাকা ) ।
তুরাগের পানি কমতির দিকে থাকলেও , আপনার গোলাপগ্রাম ভ্রমণের অর্ধেকটা আনন্দ থাকবে ৪৫ মিনিটের এই ট্রলার ভ্রমণে ।
আমি জানি , কারণ আমি এই রুটটা ব্যবহার করি নাই, অতঃপর আমাকে সব বন্ধুরা ট্রলার ভ্রমণে কত মজা করেছে সেই ফিরিস্তি আর ছবি সহ্য করতে হয়েছে 🙁 -_-
.
এছাড়া চন্দ্রা,আবদুল্লাহপুর বা নবীনগর থেকে আসতে পারেন আশুলিয়া বাজার । সেখান থেকে চারাবাগ-আকরান বাজার-গোলাপগ্রাম ।
যার যার সুবিধা মতোন রুট ব্যবহার করতে পারেন । দলে ভারী হলে বিরুলিয়া বেঁড়িবাঁধ,আশুলিয়া বাজার বা CMB , সব জায়গা থেকেই ইজিবাইক রিজার্ভ নিতে পারেন । ভাড়া ২০০ – ২৫০ টাকা পড়তে পারে ।
.
Point To be Noted :
প্রথমবারে যাওয়ার পদ্ধতিটাই কনফিউশন তৈরী করে , তাই এটা নিয়ে বিস্তারিত বললাম ।
এবার অতিদ্রুত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে চোখ বুলিয়ে নিন –
১.আকরান বাজার থেকে গোলাপগ্রাম যাওয়ার পথে চালককে বলুন মূল গোলাপক্ষেতগুলোর ওখানে নিয়ে যেতে । যেখানে Lake Island এর একটা বিশাল বিলবোর্ড আছে । অন্যথায় অন্য পাশে চলে যেতে পারেন । কারণ বিশাল গ্রামজোড়াই ফুলের বাগান ।
২. গোলাপগ্রামের মূল অংশে কয়েকটা মুদি দোকান ছাড়া তেমন দোকান দেখিনি । তাই খাওয়ার ব্যাপার থাকলে আকরান এসে করতে পারেন ।
৩. বিশাল একটা গ্রাম জুড়ে গোলাপের চাষ হওয়ায় , এলাকাটা বড় হলেও দেখার দৃশ্য সব জায়গায় একই ।
তাই ঘন্টা দুয়েকেই মনে হবে যা দেখার ছিল দেখা শেষ । তাই পুরোটা দিন কাটানোর জন্যে আদর্শ জায়গা নয় ।
৪ . গোলাপগ্রামে গিয়ে ভুলেও ছবি তোলা বা অন্য কারণে ক্ষেতে নেমে পরবেন না ।
আমার সামনেই ২/৩ টা ঘটনা দেখেছি যে , ওনারা বেশ ভদ্রভাবে কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছেন ক্ষেতে নামার কারণে ।
কারণটা স্বাভাবিক । আমাদের মতো আনাড়িরা অসাবধানে গাছের ক্ষতি করতে পারি ।
আর সারাদিনে যদি ৫০০ লোক আসে এখানে , আর তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকেও যদি না নামার কথা বলতে হয়, তবে এক সপ্তাহেই যে কারো ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটবে ।
ক্ষেতের মাঝে হাটাচলার জন্যে আইল বা পথ আছে , মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেয়ার জন্যে সুন্দর বসার স্থান আছে । এগুলো ব্যবহার করুন । ক্ষেতে না নামলে কেউ কিছুই বলবে না ।
আর অনুমতি নিয়ে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে ছবিও তুলতে পারেন ।
৫.ফুল মানে রঙ,আর রঙ মানেই আলোর খেলা । তাই রৌদ্রঝলমলে দিনে যাওয়ার চেষ্টা করুন ।
সারাদিন যদি শৈত্যপ্রবাহ থাকে , তবে পরিবেশ ও দিনটা কিছুটা মরা মরা লাগতে পারে ।
৬.চাইলে প্রিয় মানুষের জন্যে ফুল কিনে নিয়ে যেতে পারেন । এখানে বাজারে সন্ধায় একটা ফুলের হাট বসে । তবে স্বাভাবিকভাবেই আমরা সেটা দেখতে পাইনি ।
ক্ষেতের ওখানেও একটা ছোট দোকান আছে । এছাড়া সরাসরি ওনাদের কাছ থেকে কিনতে পারেন । ৫০ টা গোলাপের একটা তোড়া ১৫০ বা তার কিছু বেশি ।
**৭. খেয়াল করুন , পুরো পোস্টে কোথাও জমিদার বাড়ির কথা উল্লেখ করিনি । কারণ আমাদের যদি ভুল না হয়ে থাকে , তাহলে এই জমিদার বাড়ির ব্যাপারটা একটা ওভাররেটেড মিথ ।
বেড়িবাঁধের ব্রিজের গোঁড়া থেকে ডান দিকে ছোট একটা ব্রিজ চলে গেছে গ্রামের ভেতর । জমিদার বাড়ির যে ছবিটা দেয়া হয় , সেটা সহ আরো প্রাচীন কয়েকটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি এগ্রামে আছে । তবে এগুলোকে জমিদার বাড়ি হিসেবে এলাকার সিনিয়র সিটিজেনরাই মানতে নারাজ ।
আমাদের অভিজ্ঞতা বলি , এক মধ্যবয়স্ক চাচাকে জমিদার বাড়িটা কোথায় জিজ্ঞেস করাতে তিনি কিছুটা রুক্ষ্ণ স্বরেই বলেছিলেন , ‘ কিসের জমিদার বাড়ি ? কার বাড়ি ? কবে জমিদার ছিলো ?’
তবে বাচ্চারা একে জমিদার বাড়ি হিসেবে ভালোই চেনে । কারণটা হয়তো আমাদের মতোন আগন্তুকদের জিজ্ঞাসা ।
এমনিতে এলাকার মানুষের আচরণ স্বাভাবিক হলেও , ওনাদের দেখে মনে হচ্ছিলো আমরা কোনো ট্যুরিস্ট প্লেসে নয় , কারো বাসায় দাওয়াতে যাচ্ছি ।
কারণটা বোঝা গেলো কথিত জমিদার বাড়িটা দেখে ।
ছোট ,ভগ্নপ্রায়,অনেক পুরোনো , প্রাচীন নির্মাণশৈলিতে নির্মিত দোতলা/তেতলা কয়েকটা বাড়ি । তবে এগুলোকে ঠিক জমিদার বাড়ি বলা যায়না ।
উপরন্তু এখানে মানুষ থাকে , উঠানে বাচ্চারা খেলছে , স্বল্প পরিসরের জায়গা এবং বাড়ির সামনে কোনো একটা সংস্থার সাইনবোর্ড টানানো,এবং একটা স্থানীয় মুদি দোকান ।
অর্থাৎ জমিদার বাড়ি দেখার ইচ্ছেতে সব দিক থেকে গূড়ে বালি ।
বাড়ির ভেতরে পর্যটক ঢোকার পরিবেশ নেই , আপনার ইচ্ছেও করবে না । আফটার অল , আমরা কারো রুমের ভেতরে নিশ্চয় ঘুরে দেখতে চাইতে পারি না ।
জমিদার বাড়ির কথা শুনে পানাম,বালিয়াটি, টাঙ্গাইলের জমিদার বাড়ির ছবি মনে এঁকে গেলে আপনাকে অবশ্যই হতাশ হতে হবে । ঠিক আমার মতোন ।
তবে পুরোনো বাড়ি দেখতে চাইলে যেতে পারেন । জমিদার বাড়ি দেখতে নয় ।
তবে এলাকাটা সুন্দর । আর বেড়িবাঁধের বিশাল রাস্তার পাশ থেকে চলে যাওয়া ব্রীজটাও সুন্দর ।
এপথে ফিরতে চাইলে পড়ন্ত বিকেলে এখানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে পারেন কিছুক্ষণ । ভালো লাগবে । ব্রীজের নিচের নদী বা খালটায় পানি থাকলে আরো চমৎকার লাগতো ।
.
তবে গোলাপগ্রাম নিয়ে পোস্টগুলো বাস্তবতার নিরিখে আমার কাছে কিছুটা অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে ।
এমন পোস্ট দেখে খুব বিশাল কিছুর আশা নিয়ে গেলে কিছুটা আশাভঙ্গ হতে পারে । ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তাই খোলামেলা মতামত দিলাম ।
এছাড়া বছরের শেষের ফ্রি সময়টুকু কাটানোর জন্যে হাতের কাছে গোলাপগ্রাম নিঃসন্দেহে একটি ভালো জায়গা ।
তবে যাওয়ার আগে কোনো একটি পোস্টের(যেমন আমারটার) উপর ভরসা না করে টিওবির সার্চবক্সে লিখুন গোলাপগ্রাম ।
এসম্পর্কিত সব পোস্ট এসে যাবে । একটু সময় নিয়ে পড়ে একটা স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে নিন।
.
তারপর আর কী, বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করুন আর বেড়িয়ে পড়ুন একদিন ।
আর আদর্শ ট্রাভেলারের বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে যেকোনো ধরণের আবর্জনা(কাগজ,বোতল,প্লাস্টিকের প্যাকেট) যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন ।
স্পটে নির্দিষ্ট স্থান না পেলে সাথে করে নিয়ে আসুন যেখানে ডাস্টবিন আছে ।
পরিবেশ আমাদের জন্যে রূপসী । তার রূপ পরবর্তীদের জন্যে অম্লান রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব ।
বিশাল পোস্ট ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ।
বানান ভুল,তথ্য ভুল, শব্দচয়নসহ যেকোনো ধরণের ভুলের জন্যে দুঃখিত ।
.
সতর্ক থাকুন , নিরাপদ থাকুন ।
বেড়াতে থাকুন ।
Life is too short to explore the treasure of the nature 🙁
Make the best use of every chances.
Happy Traveling .

Post Copied From:Al Xayeed‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment